মানসিক অবসাদ কেন হয়? মুক্তির উপায় কি?

মানসিক অবসাদ (Depression) একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত কারণ। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন – কাউন্সেলিং, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং প্রয়োজনে ঔষধ সেবন। 

মানসিক অবসাদের কারণ:

  • শারীরিক কারণ: কিছু শারীরিক অসুস্থতা, যেমন – হৃদরোগ, থাইরয়েডের সমস্যা, রক্তাল্পতা, ডায়াবেটিস, এবং ঘুমের সমস্যা অবসাদের কারণ হতে পারে। এছাড়াও, শরীরে ল্যাকটিক অ্যাসিডের বৃদ্ধি, কোষের ক্ষয়, অতিরিক্ত অঙ্গ সঞ্চালন, এবং অক্সিজেনের অভাবও অবসাদের কারণ হতে পারে। 

  • মানসিক কারণ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দীর্ঘস্থায়ী শোক, আত্ম-সম্মান হ্রাস, এবং একাকীত্ব মানসিক অবসাদের কারণ হতে পারে। 

  • পরিবেশগত কারণ: কাজের চাপ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, অর্থনৈতিক সমস্যা, এবং পারিবারিক অশান্তি ইত্যাদি পরিবেশগত কারণও মানসিক অবসাদের জন্য দায়ী হতে পারে।

  • একাকিত্ব: কোন মানুষ যদি অনেক লোকজন পছন্দ করে, কোলাহল পছন্দ করে, কিন্তু কোন কারণে সে যদি পরে একাকী জীবন যাপন করতে বাধ্য হয় কিংবা অন্য কারো কথায় আঘাত পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয় সে তখন নিজেকে অসহায় বোধ করে এবং একাকিত্বের যন্ত্রণা তার মনে অসহ্য হয়ে কাটার মতো বিঁধতে থাকে আর পরবর্তীতে সেটাই ডিপ্রেশন এ পরিণত হয়। কিংবা যারা দিনের পর দিন একা থাকে বিশেষ কারো সঙ্গে মেশে না তারা ও অনেক সময় নিজেকে পৃথিবীর মধ্যে অসহায় ব্যক্তি মনে করে ডিপ্রেশনে ভোগে।

  • বর্তমান জীবনে কোন বড় পরিবর্তন এলে: মানুষের জীবন সব সময় এক নিয়মে চলে না।চলতি পথে এমন অনেক সময় আসে যেই সময় টা পুরো জীবনেরই মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই সময়ে যারা নিজেকে সামলাতে জানে তারা অনেক দৃঢ় এগিয়ে যায় কিন্তু যারা এই ধাক্কা সামলাতে না পারে তারা ডিপ্রেশন এ চলে যায়। ধরুন কেউ একজন  কোন বড় অফিসে চাকরি করে কোন একটি কারণে তার চাকরিটা চলে গেল। এই সময় তার আগের জীবন যাত্রায়  পরিবর্তন আসবে, তার পরিবারের বিলাসিতা বন্ধ হবে, তার চলার ধরন পাল্টে যাবে, ফলে এই সময় সে যদি নিজেকে শক্ত করে না ধরে থাকতে পারে তাহলে তার মনে ডিপ্রেশন আসাটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। তাই জীবনে হঠাৎ যদি কোন বড় পরিবর্তন আসে তাহলে তাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।


মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়:

  • পেশাদারের সাহায্য: মানসিক অবসাদ অনুভব করলে একজন মনোচিকিৎসক বা থেরাপিস্টের সাথে কথা বলা উচিত। তারা কাউন্সেলিং এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারেন। 

  • জীবনযাত্রার পরিবর্তন: পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং শখের প্রতি মনোযোগ দিলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। 

  • নিজের যত্ন: নিজের জন্য সময় বের করা, আরামদায়ক পরিবেশে থাকা, এবং ইতিবাচক মানুষের সাথে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

  • ওষুধ সেবন: কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিডিপ্রেসেন্ট ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। 

  • যোগাযোগ: বন্ধু এবং পরিবারের সাথে কথা বলা, তাদের সমর্থন চাওয়া, এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। 

মানসিক অবসাদ একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হতে পারে, তাই ধৈর্য ধরা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। 

Editor