লেখা: ডা. সাহেদুল আলম
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৭

যখন কিডনি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কার্যক্ষমতা হারায়, তখন রোগীর জীবন রক্ষায় প্রয়োজনে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা দরকার হয় ছবি: আনস্প্ল্যাশ
ইএসআরডি বা এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ মানে হলো কিডনি বিকল হওয়ার সর্বশেষ ধাপ। যখন কিডনি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কার্যক্ষমতা হারায়, তখন রোগীর জীবন রক্ষায় প্রয়োজনে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা দরকার হয়। ডায়ালাইসিস শুরু করার আগে রোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মনে অনেক প্রশ্ন, ভয় ও বিভ্রান্তি কাজ করতে পারে।
ডায়ালাইসিস কী?
ডায়ালাইসিস একটি চিকিৎসাপদ্ধতি যা কৃত্রিমভাবে শরীর থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল বের করে। এটি দুইভাবে করা যায়:
- হেমোডায়ালাইসিস
ক. রক্তকে শরীরের বাইরে এনে একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়।
খ. সাধারণত সপ্তাহে ২-৩ দিন, একেকবারে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
গ. এতে প্রয়োজন হয় হাতে একটি বিশেষ রক্তনালির সংযোগ বা এভি ফিস্টুলা বা ক্যাথেটার।
- পারিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস
ক. পেটের ভেতরে থাকা প্রাকৃতিক পর্দা বা পেরিটোনিয়াম ব্যবহার করে তরল বিনিময়ের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস হয়।
খ. এটি রোগী নিজে বাসায় করতে পারেন।
গ. প্রতিদিন কয়েকবার তরল ঢোকানো ও বের করার মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হয়।

ডায়ালাইসিস কখন দরকার হয়?
যখন কিডনি শরীর থেকে পানি, লবণ, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, ওষুধের বর্জ্য ইত্যাদি অপসারণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন এই বিষাক্ত পদার্থ রক্তে জমে গিয়ে জীবন বিপন্ন করে তুলতে পারে। তখন রোগীর মধ্যে নানা রকম লক্ষণ দেখা দেয় এবং ডায়ালাইসিস ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। যেমন হাত-পা, মুখমণ্ডল বা সারা শরীর ফুলে যাওয়া, মাথা ভার লাগা, দুর্বলতা, খাবারে অনীহা, ঘন ঘন বমি বা বমি বমি ভাব। নিশ্বাসে কষ্ট, বুকে চাপ। প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, মানসিক বিভ্রান্তি, খিঁচুনি, রক্তে পটাশিয়াম বেড়ে হৃৎস্পন্দনে সমস্যা ইত্যাদি।
ডায়ালাইসিসের প্রস্তুতি
মানসিক প্রস্তুতি: আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। হতাশা মোকাবিলায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা অন্য ডায়ালাইসিস রোগীর অভিজ্ঞতা শুনতে পারেন।

শারীরিক প্রস্তুতি: ফিস্টুলা তৈরি করার অস্ত্রোপচার ছোট ও নিরাপদ। শরীরে পানির ভারসাম্য, পটাশিয়াম, হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখতে ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। শুরুতে কিছু দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বমি হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে এসব ঠিক হয়ে যায়। শরীরচর্চা, হালকা ব্যায়াম ও পরিমিত ঘুম শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
পারিবারিক প্রস্তুতি: পরিবারের সদস্যদের বুঝতে হবে যে এটি রোগীর একার লড়াই নয়। চিকিৎসা শিডিউল, হাসপাতালে যাতায়াত, খাবার তৈরি, মানসিক সমর্থনে পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক প্রস্তুতি: ডায়ালাইসিস একটি চলমান চিকিৎসা; প্রতি সপ্তাহে দুই-তিনবার দীর্ঘ মেয়াদে চলবে। সরকারি হাসপাতালে তুলনামূলক কম খরচে এ সেবা পাওয়া যায়।