‘শাপলা কলি’ প্রতীকেই নির্বাচনে যাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি: ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা


নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা ‘শাপলা কলি’ প্রতীক মেনে নিচ্ছি।” দলটি সারাদেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ঢাকা, ২ নভেম্বর ২০২৫

প্রতিবেদন:

নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ নিতে রাজি হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেই সঙ্গে দলটি ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা শাপলা কলি নেব। এখন এখানে আপনাদের একটা বিষয় থাকতে পারে—শাপলা নিয়ে আমরা এখনো ব্যাখ্যা পাইনি। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তিনি বলেন, “শাপলা কলি” প্রতীকে জনগণের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন তাঁরা।

“দেশবাসীর কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। শাপলার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ‘শাপলা কলি’—মানে শাপলাও আছে, কলিও আছে,” বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনকে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশন’ আখ্যা

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন কমিশনের আচরণের সমালোচনা করে বলেন,

“এখনো নির্বাচন কমিশনকে যদি সংক্ষিপ্তভাবে বলতে হয়, আমরা এটাকে নির্বাচন কমিশন বলতে পারি না—এটা ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশন। এখানে অনেক কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে, তবুও আমরা লড়াই করে যাচ্ছি।”

তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন মাঝে মাঝে “স্বেচ্ছাচারী আচরণ” করছে এবং ভবিষ্যতেও দেশের মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা

দলটির মুখ্য সমন্বয়ক জানান, এনসিপি সারাদেশে সব আসনে প্রার্থী দেবে।

“আমরা তো বলেছি যে ৩০০ আসনেই আমরা ইলেকশন করব। দেশের যেকোনো প্রান্তের মানুষ আগ্রহী হলে আমাদের অফিসে এসে প্রার্থী হতে পারেন,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন যাতে দ্রুত এনসিপির নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করে, সে আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৈঠকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও পলিসি অ্যান্ড রিসার্চ লিড খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।

বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা

এক পর্যায়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দেশে বর্তমানে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ও চাঁদাবাজ রাজনীতি চলছে।

“জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে দেশে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। আবার বিএনপির নেতৃত্বে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস চলছে। আমরা এই দুইয়ের সঙ্গী হতে পারব না,” বলেন তিনি।

তিনি দাবি করেন, সকালে এক রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, একটি নির্দিষ্ট দলের মনোনয়নের জন্য ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।

“এই ধরনের রাজনীতি থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে,” তিনি যোগ করেন।

‘শাপলা কলি’: নতুন প্রতীকের ব্যাখ্যা

নাসীরুদ্দীন বলেন, প্রথমদিকে এনসিপি শুধুমাত্র ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়েছিল। তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক যুক্ত করা হয়। “নির্বাচন কমিশন আমাদের চিন্তার থেকেও একধাপ এগিয়ে গিয়ে ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করেছে। আমরা সেটিকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছি।”

তিনি বিশ্বাস করেন, এই প্রতীক শান্তি, নবজন্ম ও অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে জনগণের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন নির্বাচনী ময়দানে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে দাবি করছে। ‘শাপলা কলি’ প্রতীক নিয়ে দলটি মাঠে নামবে এবং সারাদেশে প্রার্থী দেবে। তবে কমিশনের প্রতি আস্থার ঘাটতি ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমালোচনার মধ্যেই এনসিপি এখন দেখছে একটি নতুন রাজনৈতিক বিকল্প গঠনের স্বপ্ন।

admin

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *