‘এ ’ ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ৬০ হাজার, অধিনায়ক-সহঅধিনায়কদের জন্য অতিরিক্ত ভাতা।

নারী ক্রিকেটে নতুন যুগ: ম্যাচ ফি, বোনাস ও ঘরোয়া চুক্তিতেও বড় পরিবর্তন আনছে বিসিবি
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ রবিবার (৩ নভেম্বর) মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিসিবির বোর্ড সভা শেষে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সভায় নারী ক্রিকেটারদের মাসিক বেতন, ম্যাচ ফি ও জয়ের বোনাসসহ সামগ্রিক আর্থিক সুবিধা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে ‘এ’ ক্যাটাগরির নারী ক্রিকেটাররা মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁদের বেতন বাড়িয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
‘বি’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের বেতন ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটারদের বেতন ৭০ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকা এবং ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে থাকা খেলোয়াড়দের ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া, জাতীয় দলের অধিনায়কদের জন্য অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা ও সহ-অধিনায়কদের জন্য ২০ হাজার টাকা ভাতা চালু করেছে বিসিবি।
নতুন বেতন ১ জুলাই থেকে কার্যকর
বিসিবির বিবৃতিতে জানানো হয়, ২০২৪–২৫ মৌসুম থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হবে। এই চুক্তি অনুযায়ী:
‘এ’ ক্যাটাগরিতে: নিগার সুলতানা জ্যোতি, নাহিদা আক্তার ও শারমিন আক্তার
‘বি’ ক্যাটাগরিতে: ফারজানা হক, রিতু মনি, ফাহিমা খাতুন, মারুফা আক্তার, রাবেয়া খান ও সোবহানা মোস্তারি
‘সি’ ক্যাটাগরিতে: স্বর্ণা আক্তার
‘ডি’ ক্যাটাগরিতে: সুমাইয়া আক্তার, ফারিহা ইসলাম, রুবাইয়া হায়দার, সানজিদা আক্তার ও নিশিতা আক্তার
এই তালিকার বাইরে যারা জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন, তাঁরা মাসিক ৬০ হাজার টাকা করে বেতন পাবেন।
ম্যাচ ফি ও বোনাসেও বাড়তি প্রণোদনা
নারী ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সভিত্তিক পুরস্কারেও যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। বিসিবি জানিয়েছে—
ওয়ানডেতে র্যাঙ্কিং ১–৩ দলের বিপক্ষে জিতলে ১ লাখ টাকা,
৪–৬ দলের বিপক্ষে জিতলে ৭৫ হাজার,
এবং ৭–৯ দলের বিপক্ষে জিতলে ৫০ হাজার টাকা করে বোনাস দেওয়া হবে।
টি-টোয়েন্টিতেও অনুরূপ পুরস্কার ব্যবস্থা থাকছে—
১–৩ র্যাঙ্কিং দলের বিপক্ষে জিতলে ৫০ হাজার,
৪–৬ দলের বিপক্ষে ৩৫ হাজার,
৭–৯ দলের বিপক্ষে জিতলে ৩০ হাজার টাকা করে বোনাস।
একইসঙ্গে সিরিজ জিতলেও একই অঙ্কের প্রণোদনা পাওয়া যাবে।
বিসিবিতে নতুন নেতৃত্ব, নতুন দৃষ্টি
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও এসেছে নতুন নেতৃত্বের ছোঁয়া। দীর্ঘ একযুগ পর বিসিবি সভাপতির পদ ছাড়েন নাজমুল হাসান পাপন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক ফারুক আহমেদ।
ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি বিসিবির পঞ্চম বোর্ড সভা। আর এই সভাতেই নারী ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের ঘোষণা আসে।
সভা শেষে ফারুক আহমেদ বলেন,
“আমাদের নারী ক্রিকেট এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছে। তাই তাঁদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। পুরুষ ক্রিকেটারদের মতোই নারী ক্রিকেটাররাও এখন থেকে ঘরোয়া ও জাতীয় দুই পর্যায়ে চুক্তিভুক্ত থাকবেন।”
ঘরোয়া চুক্তিতে আরও ৩০ ক্রিকেটার
বর্তমানে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন ১৮ নারী ক্রিকেটার। এর বাইরে আরও ৩০ জন ক্রিকেটারকে ঘরোয়া চুক্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড।
এই ৩০ জনের মধ্যে রয়েছেন—
সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদ, ইশমা তানজিম, ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা, শারমিন সুলতানা, রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক, সানজিদা আক্তার মেঘলা, জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা, সাবিকুন নাহার জেসমিন, নিশিতা আক্তার নিশি, ফাতেমা জাহান সোনিয়া, রিয়া আক্তার শিখা, জান্নাতুল ফেরদৌস তিথি, ফুয়ারা বেগম, তাজ নেহার, শরিফা খাতুন প্রমুখ।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের এই নতুন বেতন কাঠামো শুধু খেলোয়াড়দের আর্থিক নিরাপত্তাই নয়, বরং তাঁদের পরিশ্রম ও অর্জনের প্রতি বিসিবির স্বীকৃতিও বহন করে। নতুন চুক্তি, বোনাস কাঠামো এবং ঘরোয়া পর্যায়ে চুক্তিভুক্তকরণ—সব মিলিয়ে নারী ক্রিকেট এখন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে।